বিদ্যাং দেহি! || সুজান মিঠি || বিদিশা মুখার্জী (চ্যাটার্জী) । bidyan dehi

বিদ্যাং দেহি! || সুজান মিঠি || বিদিশা মুখার্জী (চ্যাটার্জী) বিদ্যাং দেহি! কলমে- সুজান মিঠি কণ্ঠে- বিদিশা মুখার্জী (চ্যাটার্জী) বিদ্যাং দেহি! সুজান মিঠি Education brings consciousness, consciousness brings revolution, revolution brings liberation. বাবা বলেছিলেন ঈশ্বরের কাছে কেবল বিদ্যা চেয়ে নিস! আমি চোখ বন্ধ করে দুহাত পেতে চেয়েছি, বিদ্যাং দেহি! বিয়ের রাতে আমার চোখ বন্ধ রেখে আমার স্বামী বলেছিলেন, তোমার মুখে জ্যোতি ফুটে ওঠে… শিক্ষার জ্যোতি, চেতনার আলো। তুমি আমায় দেখো না, আমি তোমায় দেখি যুগের পরে যুগ… বছর কয়েক পরে আমায় আদর করার ছলে গঙ্গার পার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আমার স্বামী তার দ্বিতীয় রূপজ্যোতির তাড়নায়… আমি সাঁতরে সাঁতরে টেনে হিঁচড়ে শরীরটাকে এনে ফেলেছিলাম অনেক দূরে… জ্ঞান ফিরতেই কানে এল আশ্রমের মাতাজির কন্ঠ, এই তো বিপ্লব! আমি উঠে দাঁড়ালাম। সারা শরীরে সাঁতার তখনো। দেবী মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম, বিদ্যাং দেহি! আশ্রমের মাঠের ঘাস কাটলাম। সন্ধ্যায় আরতি করলাম। আশ্রমিক শিশুদের খাতায়, মাথায়, বুকে ঢেলে দিলাম আমার অর্জিত বিদ্যা। মনে মনে ভাবলাম বিদ্যায় মুক্তি কই? শ্বাসে সুখ কই? অপেক্ষায় আরো বছর পাঁচেক, প্রশ্নটা রইল গোছানো। আশ্রমের মাতাজি গত হয়েছেন। আমি পথে পথে ছুটে গেছি...কুড়িয়ে তুলে এনেছি ফেলে দেওয়া কচি নরম প্রাণ। তাদের হৃদয়ে বাতাস দিয়েছি, ঘর দিয়েছি। সংবাদপত্রে আমার ছবি, কথা জ্বলজ্বল করেছে রোজ… আমার স্বামী তার রূপজ্যোতি হারিয়ে ফিরে এসেছে হঠাৎ এক অপরাহ্নে। আমার কাছে কেঁদে পড়েছে… আমার শিশুরা ছুটে এসে রুখে দাঁড়িয়েছে, খবরদার! আমাদের মাতাজিকে স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখাবেন না! আমার শ্বাসে সুখ, চিবুকে হাসি... আমার স্বামী যাওয়ার আগে বলে গেছে, তোমার চারপাশে এত আলো! আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল! ক্ষমা না করতে পারো, অভিশাপ দিও না! আমি সিক্ত পোশাকে দেবীর সামনে চোখ বন্ধ করলাম...বললাম, মাগো! বিদ্যাং দেহি! আমার বুকের আগুন স্তিমিত হতে হতে উত্তর দিল, বিদ্যাই তো মুক্তি! বিদ্যাই তো মুক্তি!

Post a Comment

0 Comments