ভোরের আলো ফোটেনি তখনও,চারপাশ নিঃঝুম-
গোটা শহর শীতের চাদরে গা ঢেকেছে-
হঠাৎই একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল রাস্তার একপাশে,
ডাস্টবিনের ধার ঘেঁষে কেউ রেখে গেল একটা বাক্স-মুখখোলা,
বেলা বাড়তেই হইচই বাক্স ঘিরে-
ভেতরে কাঁথায় মোড়া ছোট্ট একটি শিশু-সদ্যজাত
শিশুটির কান্না শুনে প্রথম দৌড়ে আসে ফুলি-
মিউনিসিপ্যালিটির ঝাড়ুদারনি,
ও-ই চীৎকার করে লোক জড়ো করে শিশুটিকে দেখতে
শুরু হয় আলোচনা,গবেষণা,সমালোচনা-
যৌবনের উন্মাদনায় মত্ত হয়ে শেষে-
কেউ সমাজের ভয়ে
ফেলে রেখে গেছে তার অবাঞ্ছিত সন্তান।
উঠে আসে আরো নানা কথা-ভিড় বাড়ে ক্রমশঃ,
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে, মাছি ঘুরছে ওর চারপাশে-
একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ফুলি শিশুটির মুখের দিকে,
কেউ একজন থানায় খবর দিল,একজন ফোন করছে হোমে
শিশুটিকে তো আর রাস্তায় ফেলে রাখা যায় না-
পুলিশ এল,নানারকম জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলো;
কোনো হোমের কাছেই তুলে দিতে হবে শিশুটির দায়িত্ব।
হঠাৎই এগিয়ে এল ফুলি,চোখভর্তি জল-
"বাবু,হামি যদি এই বাচ্চাটাকে ঘরে লিয়ে যাই?
হামার কোন বাচ্চা নাই, রাতদিন ঘরে অশান্তি করে
হামার স্বামী,ই বাচ্চাটাকে দেখে বড়ো মায়া লাগছে"
হাতজোড় করে পুলিশ অফিসারকে বলে ফুলি।
এরপর বাক্স থেকে শিশুটিকে কোলে তুলে নেয় সযত্নে-
পুলিশ অফিসার অবাক, অবাক উপস্থিত সকলে
ফুলি শক্ত করে আঁকড়ে রয়েছে শিশুটিকে বুকের কাছে মাতৃস্নেহে,
ফুলি জানেনা আইন,জানেনা নিয়মের বেড়াজাল-
শুধু উপস্থিত সকলে জানল সেদিন,
কিভাবে এক সন্তানহীনা দরিদ্র রমণী
আপন করে নিল এই সমাজেরই কিছু
নিষ্ঠুর মানুষের ফেলে যাওয়া-
নিষ্পাপ,অসহায় শিশুসন্তানকে।।

0 Comments